লাইপোসাকশন কি, লাইপোসাকশনে কতটুকু ওজন কমানো যায়।
লাইপোসাকশন কি – লাইপোসাকশন একধরনের অস্ত্রোপচার। এর মাধ্যমে শরীরের যেসব অংশে চর্বি বেশি জমে, সেসব স্থান থেকে চর্বি দূর করা হয়। প্রথমে অস্ত্রোপচারের জায়গায় কিছু নির্দিষ্ট অনুপাতে তৈরি করা টিউমসেন্ট ফ্লুইড বা স্যালাইনজাতীয় তরল একটি লম্বা ক্যানুলার মাধ্যমে প্রবেশ করানো হয়। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর ক্যানুলার নির্দিষ্ট ধরনের নড়াচড়ার মাধ্যমে চর্বি ভেঙে ভেঙে বাইরে থেকে একটা সাকশন (চোষণ) মেশিনের মাধ্যমে শরীর থেকে বের করা হয়।
১৯২৯ সালে প্রথম লাইপোসাকশন পরীক্ষামূলকভাবে শুরু হয়। এরপর বিভিন্ন পরিবর্তন-পরিবর্ধনের মাধ্যমে নিরাপদ লাইপোসাকশন শুরু হয় ১৯৮২ সালে। আমেরিকায় সেটা শুরু হয়েছিল একটি কর্মশালার মাধ্যমে। এখন বিশ্বে যত ধরনের কসমেটিক সার্জারি হয়, তার মধ্যে শীর্ষস্থানে লাইপোসাকশন। আমাদের দেশেও এটি জনপ্রিয় প্লাস্টিক সার্জারি।
আরো জানুনঃ
ওজন কমাতে গিয়ে যে ভুলগুলো করা উচিত না
লাইপোসাকশন সবচেয়ে বেশি কোথায় করা হয়? এটি করা হয় পেট, কোমর, ছেলেদের স্তন, চিবুক, হাত এবং পায়ের ভেতরের দিক থেকে। এ ছাড়া প্রয়োজনে পিঠ, হিপ বা কটি, ঘাড়সহ বিভিন্ন জায়গাতেও করা হয়ে থাকে।
লাইপোসাকশন কিভাবে করা হয়
লাইপোসাকশন অস্ত্রোপচার দুইভাবে করা যায়। টিউমসেন্ট ফ্লুইড দেওয়া হলে সেটা কিছুটা ব্যথানাশক হিসেবে কাজ করে। যদি অন্য কোনো অ্যানেসথেসিয়া বা চেতনানাশক না দেওয়া হয়, তাহলে এই পদ্ধতিতে কিছুটা ব্যথা পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। এতে অস্ত্রোপচারের সময় কীভাবে কী করা হচ্ছে, সেটাও রোগী টের পান।
তবে কেউ চাইলে ঘুম পাড়িয়ে বা পুরোপুরি অজ্ঞান করেও অস্ত্রোপচার করা হয়।
এতে কয় কেজি ওজন কমবে
লাইপোসাকশন ওজন কমানোর পদ্ধতি নয়। শরীরচর্চা বা খাদ্যাভ্যাস বদল নয়, সহজেই শরীরের বাড়তি ওজন ঝরিয়ে স্লিম অ্যান্ড ট্রিম হওয়া যায় লাইপোসাকশনের মাধ্যমে—এই ধারণা একেবারেই ভ্রান্ত। তাই অতিরিক্ত স্থূল মানুষ লাইপোসাকশনের প্রকৃত প্রার্থীও নন। লাইপোসাকশনের যোগ্য ব্যক্তি তিনিই, যিনি মোটামুটি স্লিম কিন্তু পেট, গলা বা শরীরের কোনো অংশে কিছু চর্বি জমেছে, যা তিনি কিছুতেই দূর করতে পারছেন না।
মোটা বা স্থূল মানুষদের জন্য কি তাহলে লাইপোসাকশন করে কোনো লাভ নেই? আছে। তবে এই সার্জারির আগে ও পরে পরিমিত খাবার এবং ব্যায়ামের মাধ্যমে সুন্দর জীবনযাত্রায় অভ্যস্ত হতে হবে। ওজন কমানোর চেষ্টা করতে হবে এবং অস্ত্রোপচারের পরও সেটা ধরে রাখতে হবে। ওজন কমানোর সাধারণ পদ্ধতিগুলো নিয়মিত চর্চার মধ্যে রাখতে হবে।
যাঁরা এই কাজগুলো করতে পারবেন, তাঁদের জন্য লাইপোসাকশন একটা প্রণোদনা বা উৎসাহমূলক প্রচেষ্টা হতে পারে। শুধু লাইপোসাকশন করে কেউ ওজন ঝরিয়ে বা শুকিয়ে সুঠাম ও স্লিম হয়ে যাবেন, এই আশা করা ঠিক নয়।
ডা. শরমিন সুমি: সহকারী অধ্যাপক, প্লাস্টিক সার্জারি, শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউট
আরো জানুনঃ