গ্যাস্ট্রিক আলসার কি? গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় কি?
গ্যাস্ট্রিক আলসার কি – গ্যাস্ট্রিক আলসার কথাটি এখন অনেকের কাছেই একটি পরিচিত শব্দ। প্রত্যেকের এই গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা কম বেশি রয়েছে। গ্যাসট্রিক বা হাইপারএসিডিটির সমস্যা থেকে গ্যাস্ট্রিক আলসারের সৃষ্টি হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার কে পেপটিক আলসার ডিজিজ অথবা গ্যাস্ট্রিক আলসার ডিজিজ বলা হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার হলো, অতিরিক্ত এসিডিটির ফলে খাদ্যনালির ভেতরে সৃষ্ট ক্ষত। যদি আপনার গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা স্বাভাবিক পর্যায়ের চেয়ে অতিরিক্ত পর্যায়ে চলে যায় তখন এই আলসারের সৃষ্টি হয়। গ্যাস্ট্রিক আলসার সৃষ্টি হয় এইচ পাইলোরি নামে একটি ব্যাকটেরিয়া থেকে।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ
গ্যাস্ট্রিক আলসার কথাটি এখন কারো কাছেই অপরিচিত নয়। কাজেই এর লক্ষণগুলো অনেকেরই জানা। গ্যাস্ট্রিক আলসার যখন শরীরে হয় তখন আমাদের শরীরে কিছু লক্ষণ দেখা দেয় যা থেকে বুঝতে পারি যে গ্যাস্ট্রিক আলসারের পূর্বাভাস। দেখুন গ্যাস্ট্রিক আলসারের বিভিন্ন লক্ষণ গুলো কি কি?
১) খাওয়ার পরে পেট ফুলে থাকা বা পেট ফাঁপা হয়ে যাওয়া।
২) বুকে জ্বালাপোড়া করা।
৩) পেটের উপরের দিকে যন্ত্রণা হওয়া।
৪) মুখ দিয়ে নুন জল উঠা।
৫) বমি বমি ভাব হওয়া কিংবা বমি হয়ে যাওয়া।
৬) পিঠে ব্যথা অনুভব হওয়া।
৭) বেশি বেশি ঢেকুর উঠা।
৮) ক্ষুধা লাগে কিন্তু অল্প খাবারই ক্ষুধা মিটে যায়।
৯) খাওয়ার প্রতি আগ্রহ কম থাকে।
১০) মূত্রত্যাগের সময় রক্তপাত।
এই লক্ষণ গুলো দেখলে আপনি সহজেই আয়ত্ত করতে পারবেন যে আপনার গ্যাস্ট্রিকের আলসার আছে বা সম্ভাবনা আছে। তাই এ ক্ষেত্রে অবশ্যই আপনি চিকিৎসকের কাছে গিয়ে নিশ্চিত হওয়ার জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখবেন।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের কারণ
পেটে অবস্থিত অ্যাসিড যা খাবার হজমে সাহায্য করে তা যদি খাদ্যনালির আস্তরণের ক্ষতি করে তখন আলসার রোগের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও পেটি হেলি ভেক্টর পাইলোরি নামক ব্যাকটেরিয়ার উপস্থিতি এবং অ্যাসপিরিন নামক অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি ব্যথা রিলিভারস ওষুধের অতিরিক্ত মাত্রায় সেবনের ফলে এই গ্যাস্ট্রিক আলসারের সৃষ্টি হয়। এছাড়াও গ্যাস্ট্রিক আলসারের সৃষ্টি হওয়ার আরো কিছু কারণ রয়েছে। যেমন:
- খাবারে অনিয়ম করা।
- সকালে দেরিতে ঘুম থেকে ওঠার বদভ্যাস এর কারণে দেরিতে নাস্তা করা।
- তেল চর্বি জাতীয় মসলাদার খাবার বেশি খাওয়া।
- পরিমাণের চেয়ে অধিক খাবার খাওয়া।
- একেক দিন একেক সময় খাবার খাওয়া।
- বাইরের দোকানের খাবার বেশি খাওয়া।
- অ্যাসপিরিন ও ব্যথা নাশক ওষুধগুলো বেশি সেবন করা।
- মসলাদার খাবার খাওয়া।
- ধূমপান এবং অ্যালকোহল অতিমাত্রায় সেবন করা।
এই কারণগুলো গ্যাস্ট্রিক আলসারের জন্য দায়ী। তাই যথা সম্ভব এগুলোকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করবেন শরীরকে সুস্থ রাখতে হলে।
আরো পড়ুনঃ
গ্যাস্ট্রিক জনিত পিঠে ব্যথা, দূর করার সহজ উপায়
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায়
গ্যাস্ট্রিক আলসারে আক্রান্ত হলে যথাসময়ে চিকিৎসা করানো উচিত। যদি কেউ অবহেলায় এই রোগটিকে দীর্ঘদিন ধরে ভোগ করে তাহলে ধীরে ধীরে তা মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখীন হতে থাকে। তাই অবশ্যই এই রোগ দেখা দেওয়া মাত্র রোগীর চিকিৎসা প্রয়োজন। ডাক্তাররা এই ধরনের রোগীকে বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
শৃঙ্খলা
পেপটিক আলসারের আক্রান্ত রোগীদের অবশ্যই ধূমপান বন্ধ করতে হবে। ব্যথা নাশক ঔষধ অর্থাৎ এস্প্রিন জাতীয় ওষুধ সেবন থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকতে হবে এবং নিয়মিত খাবার গ্রহণ করতে হবে।
ওষুধ
পেপটিক আলসারের রোগীরা সাধারণত এন্টাসিড, রেনিটেডিন, ফেমুটেডিং, ওমিপ্রাজল, লেন্সোপ্রাজল জাতীয় ঔষধ সেবনে উপকৃত হন।
কারণ ভিত্তিক চিকিৎসা
জীবানু জনিত কারণে যদি এই রোগ হয়ে থাকে তবে বিভিন্ন ওষুধের সমন্বয়ে চিকিৎসা দেওয়া হয়।
যা ট্রিপল থেরাপি নামে পরিচিত।
অপারেশন
পেপটিক আলসারের ক্ষেত্রে অপারেশন সাধারণত জরুরি নয় তবে দীর্ঘমেয়াদি ওষুধ সেবনের পরে যদি রোগী ভালো না হয় কিছু খেলে যদি বমি হয়ে যায় অর্থাৎ পোষ্ঠিক নালীর কোন অংশ যদি শুরু হয়ে যায়। সেক্ষেত্রে অপারেশনের করিয়ে রোগী উপকৃত হতে পারেন।
সময় মত পেপটিক আলচারের চিকিৎসা না করলে রোগীর বিভিন্ন ধরনের সমস্যা হতে পারে।
পেপটিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা
যারা গ্যাস্ট্রিক কিংবা পেপটিক আলসারে ভুগছেন তাদের খাদ্য নিয়ম মত খেতে হবে। তাই চিকিৎসার পাশাপাশি অবশ্যই খাদ্য তালিকা নির্বাচন করবেন। পেপটিক আলসারে আক্রান্ত রোগীদের জন্য খাদ্য সমূহ হলো:
- ভিটামিন এ সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: পেঁপে, গাজর, কুমড়া, আম, মিষ্টি আলু, পালং শাক, রেড বেল পিপার প্রভৃতি আলসার প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পাশাপাশি আলসারের ক্ষত সারাতে সাহায্য করে।
- ফাইবার সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: ওটস, ডুমুর, ব্রকলি, মিষ্টি আলু, আপেল, গাজর, ইত্যাদি। এইসব খাবারগুলো আলসারের ঝুঁকি কমায় এবং খাবারে এসিডের পরিমাণ কমায়।
- ফ্লাভোওয়েনেড সমৃদ্ধ খাবার। যেমন: গ্রিন টি, রসুন, পেঁয়াজ, আদা, রঙিন শাকসবজি, ফল।
- প্রোবায়োটিক সমৃদ্ধ খাবার
প্রোবায়োটিক খাবার গুলো হলো দই, ক্ষিমচি, মিসো প্রভৃতি। দ্রুত আলসার নিরাময়ে এই খাবারগুলো উপকারী।
গ্যাস্ট্রিক আলসার এ জন্য বর্জনীয় খাবার
গ্যাস্ট্রিক আলসারের ভুক্তভোগী রোগীরা চাইলেই সব খাবার খেতে পারবে না। নিয়ম ছাড়া খেলে তাদের সমস্যা আরও প্রকট আকার ধারণ করবে এ থেকে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের রোগ নিরাময়ে যে সমস্ত খাবারগুলো বর্জন করা জরুরি সেগুলো হল:
১) কফি কিংবা ক্যাফাইন সমৃদ্ধ খাবার।
২) অতিরিক্ত তেল মসলা ঝাল যুক্ত খাবার।
৩) ভাজাপোড়া বাদ দিন।
৪) লাল মাংস অর্থাৎ গরু খাসি ইত্যাদির মাংস।
৫) দুধ ও দগ্ধজাত খাবার।
৬) বাইরের রিচ ফুড কিংবা ফাস্টফুড।
৭) কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন।
৮) ধূমপান ও অ্যালকোহল বাদ দিন।
৯) অ্যাসপিরিন ও ব্যথা নাশক ওষুধ খাওয়া থেকে বিরত থাকুন।
১০) অতিরিক্ত টক খাওয়া বাদ দিন কারণ তা আলসারের মাত্রা বাড়িয়ে দিতে পারে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার কতদিনে ভাল হয়
গ্যাস্ট্রিক আলসার কতদিনে ভাল হয় তা নির্দিষ্ট করে বলা যায় না। তবে সাধারণত ডাক্তাররা বলে থাকে আলসার ভালো হতে প্রায় আট সপ্তাহের মতো সময় লাগে যদি তা প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে। তবে অবশ্যই এটা বয়সের উপর নির্ভর করে। নিয়ম মেনে চলতে পারলে আলসার ভালো হতে খুব বেশি সময় লাগে না।গ্যাস্ট্রিক আলসারের রোগীদের সব সময় নিয়ম মেনে থাকতে হবে এবং পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে কারণ আলসার একপ্রকার ঘা।
গ্যাস্ট্রিক আলসারের ঔষধ কোনটি
গ্যাস্ট্রিক আলসারে পেটে যে ক্ষত হয় তা সহজে নিরাময় করা গেলেও সঠিক চিকিৎসা ছাড়া তা নিরাময় করা সম্ভব নয়। চিকিৎসকরা পেপটিক আলসারের দশ দিনের জন্য ওষুধ সাজেস্ট করেন। এতে প্রধানত পিপিআই (প্রোটিন পাম্প ইনহেভেটর), ক্লারিথোমাইসিন এবং এমোক্সিসিলি গ্রুপের ঔষধ গুলোই বেশি থাকে।
গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তি পাওয়া খুব একটা কঠিন কাজ নয়। নিয়ম মেনে চললে, নিয়ম মেনে খাবার খেলে, ক্ষতিকর খাবারগুলো বর্জন করলে খুব সহজেই এই রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। এর পাশাপাশি অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিয়ে কিছু ওষুধ সেবন করাও জরুরী। তাই বিচলিত না হয়ে সঠিক চিকিৎসা নিন এবং সঠিক নিয়ম মেনে জীবন যাপন করুন। এতে করে শরীর সুস্থ থাকবে। আপনি সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবেন।
সচরাচর জিজ্ঞাসা
পেপটিক বা গ্যাস্ট্রিক আলসার কি কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত রোগ?
উত্তর: পেপটিক আলসার কোন ছোঁয়াচে বা সংক্রমিত রোগ নয়। এই রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে থাকলে অন্য কারো এই রোগ হওয়ার সম্ভাবনা নেই।
পেপটিক আলসার কি পাকস্থলীর কোনো রোগ?
উত্তর:পেপটিক আলসার যে শুধুমাত্র পাকস্থলীতেই হয়ে থাকে তা কিন্তু নয় বরং এটি পোস্ঠিক তন্ত্রের যে কোন অংশেই হতে পারে।
পেপটিক আলসার কি ক্যান্সারের কারণ হতে পারে?
উত্তর: যদি যথাসময়ে সঠিক চিকিৎসা না করা হয় তাহলে পেপটিক আলসার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে।
শেষ কথা
সম্মানিত পাঠক পাঠিকা বন্ধুরা আমাদের আজকের আর্টিকেলের মাধ্যমে আমরা তুলে ধরার চেষ্টা করেছি গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় কি। আপনারা এতক্ষণ আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ে নিশ্চয়ই এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পেরেছেন। আমাদের ওয়েবসাইটে আরও বিভিন্ন ধরনের আর্টিকেল পেতে অবশ্যই নিয়মিত ওয়েবসাইট ভিজিট করবেন। কোন প্রশ্ন থাকলে আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আর অবশ্যই আমাদের ওয়েবসাইটটি আপনার বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন এবং আমাদের সাথে থাকবেন। আজকের মতো বিদায় নিচ্ছি। সকলে ভালো থাকুন সুস্থ থাকুন।
পোস্ট টেগ
গ্যাস্ট্রিক আলসার রোগীর খাদ্য তালিকা, আলসার কত দিনে ভালো হয়, আলসার হলে কি খাব না, আলসার থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায়,গ্যাস্ট্রিক আলসারের লক্ষণ ও চিকিৎসা,আলসার হলে কি রুটি খাওয়া যাবে,আলসার হলে কি ঔষধ খাব,আলসার থেকে কি ক্যান্সার হয়।
আরো পড়ুনঃ
গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম, মেথি ভেজানো পানিতেই গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি!!