Health Tips

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি – গ্যাস্ট্রিক রোগ সম্পর্কে নতুন করে পরিচয় করিয়ে দেবার কিছু নেই। আমরা সকলেই গ্যাস্ট্রিক রোগে কমবেশি ভুক্তভোগী। এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এই গ্যাস্ট্রিক থেকেই অন্যান্য রোগ সৃষ্টি হচ্ছে আমাদের দেহে। তাই আগে মানুষ গ্যাস্ট্রিক রোগকে হালকা রোগ মনে করলেও এখন সবাই গ্যাস্ট্রিক নিয়ে আতঙ্কিত। গ্যাস্ট্রিক মরণব্যাধি ক্যান্সার পর্যন্ত সৃষ্টি করে। তাই প্রাথমিক পর্যায়ে থেকে যদি গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করা যায় তাহলে বড় ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যাবে। আর গ্যাস্ট্রিক প্রতিরোধ করতে ঘরোয়া প্রাকৃতিক খাবার বা উপাদান গুলোর কোন বিকল্প নেই।ঘরোয়া প্রাকৃতিক উপাদান গুলোর মধ্যে মেথি একটি অন্যতম উপাদান যা আমাদের সবার ঘরেই থাকে। মেথি বিভিন্ন রোগের মহা ওষুধ হিসেবে কাজ করে।

গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি

অনিয়মিত জীবনযাপন খাদ্য প্রণালী গ্যাস্ট্রিকের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। অনেকেই দীর্ঘদিন এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় ভুগে থাকেন। এই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান দেবে আপনার ঘরে থাকা একটি উপাদান তা হলো মেথি। মেথি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যায় কার্যকারী একটি উপাদান যার নিয়ম মেনে খেলে আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাবেন। নিয়ম মেনে মেথি‌ খেলে গ্যাস্ট্রিক দূর হয়। মেথি এমন একটি ঔষধ যা শুধুমাত্র গ্যাস্ট্রিক নয় গ্যাস্ট্রিক ছাড়া ও অন্যান্য জটিল রোগের ঔষধি হিসেবে কাজ করে। মেথিতে রয়েছেন নানারকম গুনাগুন যা শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

অনেক সময় আমরা দেখতে পাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে সমাধান পেতে ওষুধের পেছনে অনেকেই ছোটাছুটি করেন। কিন্তু যদি আপনার গ্যাস্ট্রিক প্রাথমিক পর্যায়ে থাকে তাহলে আপনি ঘরোয়া উপাদান মেথি খেয়ে এই গ্যাস্ট্রিক দূর করতে পারেন। গ্যাস্ট্রিক দূর করতে মেথি খাওয়ার নিয়ম জেনে নিন:

*প্রথমে একটি গ্লাসে পানি নিয়ে তার মধ্য এক চামচ মেথি ভিজিয়ে রাখুন।

*দশ মিনিট পর সেই মেথি ভেজানো পানি পান করুন অথবা সাত বাড়ানোর জন্য আপনি চাইলে মধু এবং লেবুর রস মিশিয়ে পান করুন।

*এক গ্লাস গরম পানিতে এক চামচ আস্ত মেথি ভিজিয়ে ১০ মিনিটের জন্য রেখে দিন।

*দশ মিনিট পর ওই পানিটি পান করলে গ্যাস্ট্রিক থেকে মুক্তি মিলবে।

*সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খান।

*এক গবেষণায় দেখা গেছে অন্তত 6 সপ্তাহ পর্যন্ত দিনে দুইবার করে মেথির রস নিয়মিত পান করলে এর উপকারিতা পরিপূর্ণভাবে পাওয়া যায়।

*কেউ যদি আস্ত মেথি খেতে না চান তাহলে মেথি পেস্ট করেও ভাতের সাথে মিশিয়ে খেতে পারেন।

মেথির উপকারিতা

মেথি বিভিন্ন রোগের মহা ঔষধ। মেথি রয়েছে অনেক উপকারী গুণ। মেথির উপকারিতা গুলো হলো:

১) মেথি স্তনদানকারী মায়ের দুধ বৃদ্ধি করে।

২) খাদ্য হজম শক্তি বাড়ায়।

৩) চুল পড়া কমায়।

৪) কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে।

৬) ইউরিক এসিড নিয়ন্ত্রণ করে।

৭) ক্যান্সারের ঝুঁকি কমায়।

৮) শরীরের ফোলা ফোলা ভাব দূর করে।

৯) মেথি ওজন কমাতে সাহায্য করে।

১০) মেথি কিডনির কার্যক্ষমতা বাড়ায়।

১১) শরীরকে ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

১২) মেয়েদের পিরিয়ডকালীন ব্যথা দূর করে।

১৩) বুক জ্বালাপোড়া কমাতে সাহায্য করে।

১৪) পেটের কৃমি দূর করে।

মেথির পুষ্টিগুণ

এক টেবিল চামচ মেথিতে (১১.১ গ্রাম) ৩৫ ক্যালোরি থাকে। এছাড়াও এক টেবিল চামচ মেথির পুষ্টিগুণ জেনে নিন:

প্রোটিন-৩ গ্রাম

ফাইবার-৩ গ্রাম

কার্বোহাইড্রেট- ৬ গ্রাম

চর্বি -১ গ্রাম

আইরন- দৈনিক যতটুকু প্রয়োজন তার ২০ %

ম্যাগনেসিয়াম- দৈনিক যতটুকু প্রয়োজন এর ৫%

ম্যাঙ্গানিজ- দৈনিক যতটুকু প্রয়োজন এর ৭%

মেথির অপকারিতা

*মেথির স্বাদ যেহেতু তিতা যার ফলে অনেকেরই বমি বমি ভাব বা মাথা ঘোরার সমস্যা হতে পারে।

*গর্ভবতী মায়েরা বেশিদিন মেথি খেলে তাদের সময়ের আগেই বাচ্চার জন্ম হতে পারে। এমনকি গর্ভপাত হতে পারে।

*মেথি রক্তের জমাট বাধা প্রতিরোধ করে তাই যাদের রক্ত পাতলা তাদের চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী মেথি খাওয়া উচিত।

*শরীরের রক্তের পটাশিয়াম এর পরিমাণ কমিয়ে ফেলে

*যাদের ওজন কম ওজন বাড়ানোর জন্য যারা বিভিন্ন উপায় অবলম্বন করেন তাদের জন্য মেথি বিপরীত কাজ করবে। কারণ মেথি ওজন কমাবে।

*লিভারের সমস্যা দেখা দেয় মেথি খাওয়ার ফলে।

গ্যাস্ট্রিকের জন্য মেথি   অন্যান্য ঘরোয়া খাবার

গ্যাস্ট্রিক বা এসিডিটির সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে ওষুধ সেবনের চেয়ে উত্তম ব্যবস্থা হলো প্রাকৃতিক উপায়ে তা দূর করা। প্রাকৃতিক কিছু ঘরোয়া উপাদান দিয়ে এই জটিল সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে কিছু প্রাকৃতিক উপায় জেনে নিন:

জিরা

এক লিটার পানিতে এক চা চামচ জিরা ও এক চা চামচ কাঁচা জোয়ান ভিজিয়ে রাখুন সারারাত। সকালে ঘুম থেকে উঠে খালি পেটে এই পানিটি ছেকে পান করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা দূর হবে। গ্যাস্ট্রিক সমস্যা নির্মূল করার জন্য জিরা খুবই উপকারী একটি ঘরোয়া উপাদান

পুদিনা পাতা

পুদিনা পাতা এমন একটি প্রাকৃতিক উপাদান যা গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা সমাধানে অনেক বেশি কার্যকরী। আপনি পুদিনা পাতার পানি খেয়ে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পেতে পারেন। এক কাপ পানিতে পাঁচটি পুদিনা পাতা দিয়ে ফুটিয়ে নিন। এই ফুটন্ত পানি ঠান্ডা হলে পান করুন। এতে করে আপনার পেট ফাঁপা, বমি বমি ভাব দূর হবে।

লবঙ্গ

লবঙ্গ এমন একটি কার্যকারী উপাদান যা শরীরে প্রবেশ করার সাথে সাথেই গ্যাসের প্রকোপ কমতে শুরু করে। লবঙ্গর কার্যকারিতা একাধিক গবেষণায় ও প্রমাণিত হয়েছে। তাই গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা নির্মূল করতে দু-একটি লবঙ্গ আপনি কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে পারেন।

এলোভেরা

অ্যালোভেরা কে একাধিক রোগের ঔষধ বলা হয়। অ্যালোভেরায় থাকে নানাবিধ খনিজ যা একদিকে যেমন আপনার ত্বকের বাহ্যিক সৌন্দর্যকে বাড়াবে তেমনি আপনার হজম শক্তিকে উন্নত করবে। এলোভেরা উপাদান পেটে তৈরি হওয়া এসিডের কার্যকারিতাকে কমিয়ে দেয় যার ফলে এসিডিটি সমস্যা একেবারে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।

দারুচিনি

আপনি হয়তো জেনে অবাক হবেন গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানে দারুচিনি বিশেষভাবে কার্যকারী একটি ঘরোয়া উপাদান। দারুচিনি এসিডিটি পেট ব্যথা এবং পেটের গ্যাসের সমস্যা নির্মূল করতে তাৎক্ষণিকভাবে কাজ করে। আপনি চাইলে কফি ওটমিল কিংবা গরম দুধে দারুচিনি গুঁড়া মিশিয়ে খেতে পারেন এতে করে আপনি গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধানে খুব দ্রুত ফলাফল পাবেন। এছাড়াও আপনি চাইলে গরম পানিতে দারুচিনি ফুটিয়ে ছেঁকে মধু দিয়ে চায়ের মত পান করতে পারেন।

আদা

আদা খুবই উপকারী একটি উপাদান। আদায় গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা নির্মূল করে। আদায় রয়েছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও এন্টি ইনফ্লামেটরি উপাদান প্রদাহ যা গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা থেকে মুক্তি দিতে সাহায্য করে।

বেকিং সোডা

বেকিং সোডায় থাকা এসিডিটিক উপাদান মানবদেহের পাকস্থলির অতিরিক্ত এসিডের মাত্রা কে নিয়ন্ত্রণ করে, গ্যাস দূর করে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যার সমাধান করে। ১/৪ চামচ বেকিং সোডা একগ্লাস পানিতে ভালো করে গুলিয়ে নিবেন। আপনি যখন গ্যাস্ট্রিকের  লক্ষণ অনুভব করবেন তখন এটি পান করে নিবেন। এতে দ্রুত ফলাফল পাবেন।

শসা

শসা পেটকে ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করে। শসা রয়েছে ফ্লেভানয়েড ও অ্যান্টি ইনফ্লেমেটরি উপাদান যা আপনার পেটের গ্যাসের উদ্বেগ কমাবে।

পেঁপে

গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা থেকে মুক্তি দিতে পেঁপে একটি কার্যকারী ফল যা আপনার হজম শক্তিকে বাড়াতে সাহায্য করে। পেঁপে তে থাকা পাপিয়া নামের এনজাইম পেটের হজম শক্তি বাড়ায়। নিয়মিত পেঁপে খাবার অভ্যাস করলে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা কম থাকে।

কলা  কমলা

কলা ও কমলা এমন দুটি ফল যা পাকস্থলীর অতিরিক্ত সোডিয়াম দূর করতে সাহায্য করে। কলা ও কমলা খাওয়ার ফলে গ্যাসের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। কলার দ্রবীভূত উপাদান থেকে সক্ষম ফাইবার কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। সারাদিনের অন্তত দুটি কলা খাবেন। পেট পরিষ্কার রাখতে কলা খাওয়া জরুরি।

পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম

রাতে মেথি পানিতে ভিজিয়ে সকালে মেথি সহ পানি খালি পেটে খেলে পুরুষের বীর্যের শুক্রানু বাড়ে তবে তিন মাস লাগাতার এটি খেতে হবে। যাদের বাচ্চা হচ্ছে না পুরুষের সমস্যার কারণে তাদের শুক্রাণু বাড়াতে তিন মাস মেথি গোটা অথবা গুঁড়া পানিতে রাতে ভিজিয়ে সকালে খালি পেটে খেতে পারেন।

সাধারন প্রশ্ন ও উত্তর

মেথি কি?

মেথি

ইংরেজিতে মেথিকে বলা হয় ফেনোগ্রিক। এটি একটি মৌসুমী জাতীয় গাছ। গ্রামবাংলায় এটির পাতাকে শাক হিসেবেও খাওয়া যায়। Trigonella Foenum-graecum হচ্ছে মেথির বৈজ্ঞানিক নাম।

মেথির উপকারিতা কি?

মেথির বিভিন্ন ধরনের উপকারিতা রয়েছে। এতে আছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হজম ক্ষমতা বাড়ায়। এটতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার ও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা আমাদের হজম ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। সকালে খালি পেটে মেথি ভেজানো পানি খেলে কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা ও দূর হয়।

গ্যাস্ট্রিক বদহজমের মহা ঔষধ কি মেথি?

হ্যাঁ, মেথি গ্যাস্টিক ও বদ হজমের মহা ঔষধ হিসেবে কাজ করে।

শেষ কথা

আমাদের আজকের আর্টিকেলটিতে আলোচনা করা হয়েছে গ্যাস্ট্রিকের মেথি খাওয়ার নিয়ম সম্পর্কে। ইতোমধ্যেই আপনারা আজকের আর্টিকেলটি পড়ে বিষয়গুলো সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। এ বিষয়ে কারো কোন জিজ্ঞাসা থাকলে অবশ্যই আমাদের কমেন্টের মাধ্যমে জানাতে ভুলবেন না। আপনাদের যদি আমাদের ওয়েবসাইটের আর্টিকেল গুলো ভালো লাগে তাহলে অবশ্যই বন্ধুদের সাথে শেয়ার করবেন আমাদের ওয়েবসাইটের কথা।

আরো নতুন নতুন আর্টিকেল পেতে আমাদের ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করবেন। আজকের মতো এ পর্যন্তই। সবাই ভাল থাকবেন সুস্থ থাকবেন।

পোস্ট ট্যাগ

মেথির ক্ষতিকর দিক,খালি পেটে মেথি ভেজানো জল খেলে কি হয়,পুরুষের জন্য মেথি খাওয়ার নিয়ম,মেথি সম্পর্কে হাদিস,পুরুষের জন্য মেথির উপকারিতা,মেথি পাউডার খাওয়ার নিয়ম,গ্যাস্ট্রিক দূর করার উপায়,গ্যাস্ট্রিকের জন্য কি খাওয়া উচিত।

আরও জানুনঃ

গ্যাস্ট্রিক আলসার কি? গ্যাস্ট্রিক আলসার থেকে মুক্তির উপায় কি?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *