Others

ইসলামী অর্থনীতি কি? ইসলামী অর্থনীতির  বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতির পর্যালোচনা

ইসলামী অর্থনীতি কি – ইসলামি অর্থনীতি হলো কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক অর্থনৈতিক লেনদেন ব্যবস্থা। ইসলামি কৃষ্টি ও তামাদ্দুন সমৃদ্ধ যে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে তাই ইসলামি অর্থনীতি। প্রখ্যাত সমাজ বিজ্ঞানী ইবনে খালদুন বলেন- ইসলামি অর্থনীতি হলো জনসাধারণের সাথে সম্পর্কিত বিজ্ঞান।

ইসলামী অর্থনীতি, বৈশিষ্ট্য ও মূলনীতি

ইসলামী অর্থনীতি বর্তমান বিশ্বের একটি জনপ্রিয় অর্থব্যবস্থা। মুসলিম দেশ ছাড়াও বহু অমুসলিম দেশ এই ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে। মুসলিম দেশের পাশাপাশি পৃথিবীর অনেক অমুসলিম দেশেও ইসলামী ব্যাংকিং চালু আছে। এ অর্থনীতি বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও স্বকীয়তায় ভরা।

কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক পর্যালোচনা

ইসলামী অর্থনীতি কোরআন ও সুন্নাহ নির্দেশিত। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ব্যবসা হালাল করেছেন ও সুদকে হারাম করেছেন।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৫)

ইসলামী অর্থনীতিতে আসমান ও জমিনের সব সম্পদে সবার সমান অধিকার দেওয়া হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘তিনি তোমাদের জন্য পৃথিবীতে যা কিছু আছে সব সৃষ্টি করেছেন।

অতঃপর তিনি আকাশের প্রতি মনঃসংযোগ করেন। অতঃপর সপ্ত আকাশ সুবিন্যস্ত করেন এবং তিনি সর্ব বিষয়ে মহাজ্ঞানী।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৯)

ইসলামী অর্থনীতিতে বৈধ লেনদেন ও ইজারা ইত্যাদির মাধ্যমে উপার্জন ও রিজিক তালাশের স্বাধীনতা আছে। ইরশাদ হয়েছে, ‘হে ঈমানদারগণ! আমি তোমাদের যা উপজীবিকা স্বরূপ দান করেছি সেই পবিত্র বস্তু ভক্ষণ করো এবং আল্লাহর কাছে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো, যদি তোমরা তাঁরই উপাসনা করে থাকো।

’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ১৭২)

ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত কল্যাণের যত্ন করা হয়। তাই প্রতিবেশীকে শুফার অধিকারসহ বিভিন্ন হক প্রদান করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘আত্মীয়-স্বজনকে তার প্রাপ্য দেবে এবং অভাবগ্রস্ত ও মুসাফিরকেও এবং কিছুতেই অপব্যয় কোরো না।’ (সুরা : ইসরা, আয়াত : ২৬)

ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত কল্যাণের ওপর সামাজিক কল্যাণ প্রাধান্য দেওয়া। ইসলামী অর্থনীতিতে ব্যক্তিগত কল্যাণের ওপর দলের ও সমাজের কল্যাণ প্রাধান্য আছে।

তবে তা হতে হবে ন্যায় ও নীতির ভিত্তিতে। তাই জনসাধারণ চলাচলের জন্য রাস্তার জমিও ছাড় দিতে হয় এবং মানুষের চাহিদা মেটানোর প্রয়োজনে গুদামজাতকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ইমাম আহমদ বর্ণনা করেন, ‘ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি ৪০ দিন যাবৎ খাবার গুদামজাত করবে সে আল্লাহর জিম্মা থেকে পবিত্র। আল্লাহও তার জিম্মাদারি থেকে মুক্ত।’ তেমনি যে মহল্লাবাসীর মধ্যে ক্ষুধার্ত ব্যক্তি থাকবে তারা আল্লাহর জিম্মা থেকে মুক্ত।’ (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ৪৮৮০)

ইসলামী অর্থনীতিতে সব ক্ষেত্রে সুদ হারাম করা হয়েছে। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘হে মুমিনরা! তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং সুদের বকেয়া যা আছে তা ছেড়ে দাও—যদি তোমরা মুমিন হও।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৭৯)

ইসলামী অর্থনীতিতে সর্বনিম্ন জীবিকার দায়িত্ব নেওয়া হয়েছে। ইসলামে প্রত্যেকের সর্বনিম্ন জীবিকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। তাই কেউ অক্ষম হলে তার দায়িত্ব ছেলে বা মা-বাবা বা স্বামী বা আত্মীয়-স্বজনকে গ্রহণ করতে হয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘ধনীদের ধন-সম্পদে আছে অভাবগ্রস্ত ও বঞ্চিতদের হক।’ (সুরা : জারিয়াত, আয়াত : ১৯)

ইসলামী অর্থনীতি সৎ চরিত্র দ্বারা বেষ্টিত। তাই একে অন্যকে ধোঁকা, প্রতারণা ও ক্ষতিসাধনের অনুমতি নেই। ইমাম মুসলিম বর্ণনা করেন, আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি আমাদের ওপর হাতিয়ার উঠাবে সে আমার দলের নয়। আর যে প্রতারণা করবে সে আমার দলের নয়।’ (মুসলিম, হাদিস : ১০১)

ইসলামী অর্থনীতিতে অপব্যয় বৈধ নয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘…অপব্যয় ও অমিতচার করবে না। কেননা আল্লাহ অপব্যয়কারীদের ভালোবাসেন না।’    (সুরা : আরাফ, আয়াত : ৩১)

করজে হাসানা ইসলামে স্বীকৃত বিষয়। মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন, ‘কে আছ যে আল্লাহকে উত্তমভাবে ঋণদান করবে? অনন্তর তিনি তাকে দ্বিগুণ বহুগুণ বর্ধিত করেন এবং আল্লাহ সংকুুচিত বা সচ্ছল করে থাকেন এবং তাঁর দিকে তোমাদের প্রত্যাবর্তন করতে হবে।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৪৫)

ইসলামী অর্থনীতির উৎস হলো কোরআন, সুন্নাহ, আহকামে ফিকহিয়্যা ও শরয়ি মূলনীতি। (আল ইকতিসাদুল ইসলামী, ওজারাতুল আওকাফ আস সাউদিয়্যা, পৃষ্ঠা ৪)

ইসলামী অর্থনীতির স্তম্ভ তিনটি। এক. ব্যক্তিগত ও সমষ্টিগত মালিকানার স্বীকৃতি। দুই. ইসলামী শরিয়াহর আলোকে অর্থনৈতিক স্বাধীনতা। তিন. ভারসাম্যতার মাধ্যমে সামাজিক ইনসাফ। (দারুল ইফতা মিসরিয়্যা, ফতাওয়া দারিল ইফতা মিসরিয়্যা, খণ্ড ১০, পৃষ্ঠা ৩০৮)

ইসলামী অর্থনীতিতে রাষ্ট্রীয় মালিকানা স্বীকৃত। যেমন—মালে গনিমত, খুমুস, ফাই ইত্যাদি।

ইসলামী অর্থনীতিতে প্রতিযোগিতামূলক স্বাধীনতা আছে। ফলে পণ্য বিক্রির ক্ষেত্রে মূল্য নির্ধারণ সরকারিভাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। (মুনাজ্জামাতুল মুতামারুল ইসলামী, মাজাল্লাতুল ফিকহিল ইসলামী, খণ্ড ৯, পৃষ্ঠা ৮২০)

সারকথা হলো, ইসলামী অর্থনীতির সঙ্গে বিশ্বাস ও শরিয়তের বিধানের সম্পর্ক আছে। তবে ইসলামে ব্যক্তিমালিকানা স্বীকৃত এবং নির্দিষ্ট সীমারেখায় স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। ফলে ইসলামী অর্থনীতিতে কিছু মূলনীতি খেয়াল করতে হয়।

(মুফতি হুমায়ুন কবির খালভি)

সুত্রঃ কালের কন্ঠ

আরো জানুনঃ

সুলতান সুলেমান কে ছিলেন? সুলতান সুলেমান এর ইতিহাস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *