অটোমেশন কি? অটোমেশনর গুরুত্ব ও ব্যবহার
অটোমেশন – বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে আমরা সবাই কোনো না কোনোভাবে অটোমেশনের সাথে জড়িয়ে আছি। যারা ছাত্র-ছাত্রী আছে তারা একভাবে অটোমেশনের সাথে জড়িয়ে আছে অথবা যারা কর্মজীবনে আছে তারা অন্যভাবে অটোমেশনের সাথে জড়িয়ে আছে। এই আর্টিকেলে আমরা অটোমেশন কি এই সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করবো।
অটোমেশন কি
অটোমেশন হলো কম মানবসম্পদ ব্যবহার করে আরো উন্নত এবং উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষে টেকনোলজির ব্যবহার। অটোমেশন টেকনোলজির মাধ্যমে কাজের কৌশল, কাজের দক্ষতা, নির্ভরযোগ্যতা এবং কাজের গতিকে উন্নত করা হয়।
এটিকে আমরা একটি কম্পিউটার বা রোবটের সঙ্গে তুলনা করতে পারি। কম্পিউটার এবং রোবটকে যেমন কোন একটি কাজের জন্য নির্দেশ দিলে এটি ঘন্টার পর ঘন্টা বিরামহীনভাবে চলতে পারে তেমনিভাবে অটোমেশন প্রক্রিয়াও তাই।
এই অটোমেশনগুলির কাজ হলো কাজের প্রক্রিয়াগুলিকে স্ট্রিমলাইন করা। এর মাধ্যমে কাজের দক্ষতা বৃদ্ধি পায় তেমনিভাবে মানুষ সৃষ্ট ভুলগুলিকে কমিয়ে নিয়ে আসা যায়।
অটোমেশনের গুরুত্ব
অটোমেশন আমাদের জীবনের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ এটা জানার জন্য আপনি আপনার হাতে থাকা ফোন বা কম্পিউটারের কথা চিন্তা করুন। ভাবুন যদি এটা আপনার কাছে যদি না থাকতো তবে কেমন হতো আপনার স্বাভাবিক কাজকর্ম। কতটা কঠিন হয়ে যেত তাইনা। এইযে ফোন বা কম্পিউটার আমরা আমাদের শিক্ষা, চাকুরী বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে কাজে লাগাই এটাকে আপনি একপ্রকার অটোমেশন বলতে পারেন।
যারা অটোমেশন নিয়ে কাজ করে তারা আমাদের চারপাশের অনেক গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাগুলির সমাধান করে থাকে। অটোমেশন পেশাদারদের কাজ সাধারণত জনগণের স্বাস্থ্য, নিরাপত্তা, সামাজিক উন্নয়ন এবং জীবনযাত্রার মান বাড়ানোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে।
অটোমেশনের ব্যবহারসমূহ
বর্তমানে আমরা নানাভাবে অটোমেশন ব্যবহার করে আমাদের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করেছি। বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রিতে আমরা অটোমেশনের ব্যবহার করে থাকি। নিচে অটোমেশন ব্যবহারের কিছু ক্ষেত্রসমূহ উল্লেখ করা হলো।
উৎপাদন এবং রোবটিক্সে অটোমেশন
রোবটিক্স বা রোবটের কথা হয়তো আপনি নিশ্চয় শুনে থাকবেন। বাংলাদেশের শ্রম বাজারে রোবট বিভিন্নভাবে প্রভাব বিস্তার করে চলছে। রোবট বলতে যে তাকে মানুষের মতই দেখতে হতে হবে বা এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলতে পারবেন ব্যাপারটা তেমন না।
যেমন ব্রিটানিকা ডিকশনারি অনুযায়ী, কোনো একটি মেশিন যদি মানুষের সাহায্য ছাড়া নিজে নিজে একটি কাজ করে ফেলতে পারে বা মানুষের পরিশ্রম কমিয়ে দিতে পারে তাহলে সেটাকেই রোবট বলা যায়।
বিবিসি এর একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, একটি মাঝারি আকারের কারখানার কাটিং সেকশনে দেড়শো–দুশো লোক লাগতো। সেখানে একটি অটোমেটিক কাটিং মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে, যেখানে শ্রমিক লাগে দশ থেকে বারো জন। আশা করা যায় আগামী দশ বছরে এই শিল্পে যে বিরাট পরিবর্তন ঘটবে তাতে কোন সন্দেহ নেই।
ফিন্যান্স এবং ব্যাংকিং ক্ষাতে অটোমেশন
বর্তমানে বাংকগুলিতে ব্যপকভাবে অটোমেশন ব্যবহার করা হচ্ছে। একটা উদাহরণ দিলে হয়তো আরো পরিষ্কার বোঝা যাবে।কিছু ব্যাংকে গেলে দেখবেন মেইন দরজার ওখানে একটা বুথ রাখা আছে। যেখান থেকে আপনি নিজেই কি ধরনের সার্ভিস নিবেন সেটা সিলেক্ট করে নিজে নিজেই একটা টোকেন নিতে পারবেন। টোকেন এ একটা নাম্বারও দেওয়া থাকবেন। এরপর আপনি বসে অপেক্ষা করবেন আপনার সিরিয়ালের জন্য।
আপনার সিরিয়াল আসলে মনিটর স্কিন এবং স্পিকারের মাধ্যমে আপনাকে নির্দিষ্ট কাউন্টারে যেতে বলবে। আপনি তখন গেলেই সার্ভিসটি পেয়ে যাবেন। অথচ আগে এই নির্দিষ্ট কাজের জন্য অনেক বড় সিরিয়ালে দাড়িয়ে থাকা লাগতো। এখন সিরিয়াল ছাড়াই আপনি এই কাজটি করে নিতে পারবেন। এটাই হলো অটোমেশন এর একটি প্রকৃত উদাহরন।
স্বাস্থ্য ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে অটোমেশন
স্বাস্থ্যসেবাতেও অটোমেশন আমাদের বিভিন্নভাবে সাহায্য করে আসছে। যেমন ডায়াগনস্টিক, বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষাি, চিকিৎসা এবং রোগির যত্নে এটি বিভিন্নভাবে কাজ করে থাকে।
ই কমার্স ব্যবসায়
ই কমার্স ব্যবসার ক্ষেত্রে অটোমেশন ব্যাপক ভূমিকা পালন করে আসছে। জনপ্রিয় ই কমার্স প্রতিষ্ঠান অ্যামাজন তার ইনভেনটরি ম্যানেজমেন্ট, স্টোরেজ অপটিমাইজ এবং অর্ডার ম্যানেজ করতে অটোমেশন সিস্টেম ব্যবহার করে থাকে।
যানবাহনের ক্ষেত্রে
যানবাহনের ক্ষেত্রে বিভিন্নভাবে অটোমেশনের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন বিশ্বের বিভিন্ন শহরে এখন ড্রাইভার ছাড়াই গাড়ি চালানো হয়। স্টিয়ারিং হুইল একা একা ঘুরতে থাকে। গাড়ির ক্যামেরা, লেজার রশ্মির লিডার সিস্টেম এবং রেডার থেকে পাওয়া ডেটা ব্যবহার করে গাড়িটি রাস্তা দেখে এবং সেই অনুযায়ী রাস্তায় চলাচল করে। এবং পুরো সিস্টেমের পিছনে কাজ করে একটি আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআই প্রযুক্তি।
বিদ্যুৎ সাশ্রয় করতে
বর্তমানে অনেক ধরনের বিদ্যুৎ সাশ্রয়ী প্রযুক্তি উদ্ভাবন হয়েছে যার মাধ্যমে আমরা আমাদের বিদ্যুৎ খরচ কমাতে পারি বা অপচয় রোধ করতে পারি। যেমন বর্তমানে অনেক বৈদ্যুৎতিক বাল্ব পাওয়া যায় যেগুলো সয়ংক্রিয়ভাবে শুধুমাত্র মানুষের উপস্থিতেই জ্বলবে। কেউ না থাকলে অটোমেটিকভাবে বন্ধ হয়ে যাবে।
আমাদের বাসা বাড়িতেও দেখা যায় অনেকে পানির মোটরের জন্য অটো সুইচ ব্যবহার করা হয়। যেখানে পানি কমে গেলে সুইচ একা একা অন হয়ে পানি ভরতে থাকবে আবার ট্যাংক যদি ভরে যায় একা একাই সুইচ বন্ধ হয়ে পানি উঠা বন্ধ হয়ে যাবে। এই অটোমেশন সিস্টেম যেমন আমাদের বিদ্যুৎ অপচয় রোধ করছে তেমনিভাবে পানির অপচয়ও কিন্তু রোধ হচ্ছে।
এআই চ্যাটবোট
এআই চ্যাটবোটের মাধ্যমে আমরা ২৪/৭ সার্বক্ষণিক কাস্টমার সার্ভিস দিতে পারি। এমনকি আপনি ফেসবুক হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমেও আপনি অটোমেটিক রিপ্লে সিস্টেম চালু করে রাখতে পারেন। এতে করে কাস্টমার যখনই আপনাকে মেসেজ করে একটি অটোমেটিক রিপ্লে তার কাছে পৌছে যাবে।
পরিশেষে
পরিশেষে বলা যায় বর্তমান বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গেলে আমাদের ব্যবসা বা কাজকেও অটোমেশনের দিকে নিয়ে যেতে হবে। এতে করে যেমন আমরা আমাদের সময়, খরচ বাচাঁতে পারবো অন্যদিকে আমাদের প্রোডাকশনও বহুগুণে বৃদ্ধি পেতে পারে।
আশা করা যায় ভবিষৎতে অটোমেশনের অনেক বড় সম্ভবনা রয়েছে। AI, মেশিন লানিং এবং IoT এর মাধ্যমে আমরা আমাদের পুরোনো সিস্টেমকে অটোমেশন করে ফেলতে পারি।
আরো জানুনঃ